• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন |

“আমাকে বাঁচাও, সারা জীবন চাকর হয়ে থাকব”

সিসি নিউজ ডেস্ক।। সিরিয়ার হারাম শহরের কাছে ছোট এক গ্রাম, বেসনায়া-বেসিনেহ। ওই গ্রামের দুটি শিশু ভূমিকম্পের পর বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে। প্রায় দুই দিন আটকে থাকার পর শিশু দুটিকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দেখতে পান উদ্ধারকারীরা। এ সময় ছোট শিশুটিকে আঘাত থেকে রক্ষা করতে বড় বোন হাত দিয়ে আগলে রেখেছিল। শিশু দুটির করুণ এই ছবি ও উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বয়সে বড় শিশুটির নাম মারিয়াম এবং ছোট শিশুটির নাম ইলাফ। ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট্ট ইলাফকে আগলে রেখেছিল মারিয়াম। আলতো করে ছোটটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। অল্প জায়গায় কোনোরকমে শুয়ে আছে। হতে পারে তারা বিছানাতে ছিল। আর সেখানেই চাপা পড়ে।

বড় বোনটিকে ফিসফিস করে বলতে শোনা যায়, ‘আমাকে বাঁচাও, আমি তোমার জন্য সবকিছু করব। সারা জীবন চাকর হয়ে থাকব।’ এ সময় একজন উদ্ধারকারী উত্তরে বলছিলেন, ‘না, না, কি বলছ।’

সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা যায়, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা ওই দুটি শিশুকে ৩৬ ঘণ্টারও বেশি সময় পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবারের ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আটকা পড়েছিল তারা।

যখন মারিয়াম এবং ইলাফকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে কম্বলে মোড়ানো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন স্থানীয়দের উল্লাস করতে দেখা যায়। পরে শিশু দুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শিশু দুটির বাবা মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ জানান, তাঁর স্ত্রী এবং তিন সন্তান গত সোমবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছিলাম মাটি কাঁপছে, আর পলেস্তারা আমাদের মাথায় পড়তে শুরু করে। আমরা দুদিন ধরে এই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলাম। এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আশা করি এই অনুভূতি কারও জীবনে না আসুক।’

আল-সাঈদ আরও জানান, ‘চাপা পড়া অবস্থায় আমি এবং পরিবারের সদস্যরা উচ্চ স্বরে কোরআন পাঠ করছিলাম যেন কেউ আওয়াজ শুনতে পান। লোকজন আমাদের আওয়াজ শুনতে পারেন এবং আমাদের উদ্ধার করা হয়। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমরা পরিবারের সবাই বেঁচে আছি এবং যারা আমাদের উদ্ধার করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন যারা তীব্র ঠান্ডার কারণে তাদের জন্যও টিকে থাকা কঠিন। আর সেখানে এখনো যারা উদ্ধার হননি তাদের জীবিত পাওয়ার আশা সময়ের সঙ্গে ক্ষীণ হয়ে আসছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তুরস্কে ৬ হাজার ৯৫৭ জন মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। অপরদিকে সিরিয়ায় ২ হাজার ৫০০ জন মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে। এ সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্ধারকারীরা আটকে থাকা জীবিতদের কাছে পৌঁছতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

আর্কাইভ